ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি- আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু। গতবারের মতো এবারও যাতে কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস কিংবা ভুয়া প্রশ্ন ছড়াতে না পারে সেজন্য র্যাব,শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষামন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। এরই মধ্যে প্রশ্ন ফাঁস রোধে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ফয়েল পেপারের বিশেষ নিরাপত্তা-প্যাকেটের মাধ্যমে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই প্যাকেট ট্রেজারি বা ব্যাংকের ভল্ট থেকে কেন্দ্রে নেয়ার পথে কেউ খুললে সহজেই ধরা পড়বে। এছাড়াও পরীক্ষা সামনে রেখে আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে এক মাস বন্ধ থাকছে দেশের সব কোচিং সেন্টার। প্রশ্নফাঁস রোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে র্যাব তিন ধাপে প্রশ্নফাঁস রোধে কাজ করছে। প্রথমত সাইবার পেট্রোলিং দ্বিতীয়ত আন্ডারওয়ার্ল্ডয়ে গোয়েন্দা নজরদারি এবং তৃতীয়ত প্রিভেনটিভ মেজারমেন্ট বিষয়ে কাজ শুরু করেছে তারা। এ সম্পর্কে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং-এর ডেপুটি ডিরেক্টর মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, সাইবার পেট্রোলিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন পেজকে নজরদারির মধ্যে রাখা হবে যেন এগুলোর সাহায্যে কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে। তিনি আরও বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডে ছদ্মবেশে এবং অনেক সময় ক্রেতা বা বিক্রেতার বেশে প্রশ্ন বিক্রি বা কেনার নামে মূল চক্রকে ধারার জন্য তৎপর থাকবে আমাদের লোকজন। প্রিভেনটিভ মেজারমেন্টে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের সচেতন করা হবে। গতবছর প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত ১২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে কিছু শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী রয়েছে। উভয়ের ভবিষ্যতের জন্য যা হুমকি। ২১ লাখ পরীক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষা এলেই একটা হুমকি দেখি। বিশৃঙ্খলা ও প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়। তাই অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ফাঁসের প্রতারণায় পা না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাজ হল পড়াশোনা করা। তারা যেন প্রশ্নের জন্য দৌড়াদৌড়ি না করে পড়ালেখা করে। প্রশ্ন ফাঁসের প্রতারণার পেছনে দৌড়ে তার শিক্ষা জীবন যেন নষ্ট না করে। কেউ প্রশ্ন ফাঁস করার অপচেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে হাইকোর্টের আদেশে দুটি কমিটি করা হয়েছে। আশা করি এ বছর প্রশ্ন কোনোভাবেই ফাঁস হবে না। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির প্রধান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, আমরা বিগত জেএসসি এবং পিএসসি পরীক্ষায় যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় এর থেকে বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কোনও ধরণের গুজব এবং বিভ্রান্তি যেন না ছড়ায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবারও পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। যদি বিশেষ কোনও কারণে কারও দেরি হয়, সেই ক্ষেত্রে দেরির কারণ ও পরীক্ষার্থীর নাম-ঠিকানা লিখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। জিয়াউল হক বলেন, প্রশ্নফাঁস রোধে আরেকটি পদক্ষেপ হচ্ছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সীমিত করা। শুধু কেন্দ্র সচিব ক্যামেরাবিহীন ও ইন্টারনেট সংযোগবিহীন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া পরীক্ষা ও প্রশ্ন বহনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ কোনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। পরীক্ষার কাজে জড়িত নন এমন কেউ কেন্দ্রে যেতে পারবেন না। এসব নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের দায়ে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি পেতে হবে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ফলে ২০১৮ সালে প্রশ্নফাঁসের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে ২০১৮ সালে নেয়া পদক্ষেপগুলো এবারও অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আরও নতুন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা কার্যকর করা হবে। প্রশ্নফাঁসের চেয়ে অতীতে গুজবই ছিল বেশি। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হয়েছে। আর/০৮:১৪/২৯ জানুয়ারি

from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2Gar3W4