ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ইসি সুষ্ঠু দাবি করলেই যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে যাবে এমন কথা কোথাও নেই।জনতার চোখ বলে একটি কথা আছে- আমাদের ও আপনাদের সবার কর্মকাণ্ড জনতার চোখে পরীক্ষিত হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে আসন্ন ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মূল্যায়নে মানুষের মতে (পাবলিক পারসেপশন) গুরুত্ব দিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি খুবই সন্তোষজনক হয়েছে? এ ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন কী, তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। একটি যথার্থ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আমাদের সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। একাদশ নির্বাচন নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমি কিছুটা পড়ালেখা করার চেষ্টা করেছি। এর অভিজ্ঞতা কিঞ্চিত আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি, যা আপনাদের সহায়ক হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত দুই প্রধান শক্তির ওপর নির্ভরশীল। একদিকে নির্বাচন কর্মকর্তা বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমি এখন পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র দেখেছি, তাতে রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষক পর্যন্ত সবার প্রতিবেদনে দুটি শব্দ অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। একটি শব্দ হচ্ছে- সন্তোষজনক এবং অন্য শব্দটি হচ্ছে- স্বাভাবিক। তার মানে আমাদের নির্বাচন কি খুবই সন্তোষজনক হয়েছে? এ ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন কী, তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে-যোগ করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করার বিষয়ে আমি সবসময় গুরুত্বারোপ করেছি। এই গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে। ভারত সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে আমি ভারতে ছিলাম। সেখানে একটি পত্রিকায় নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে লেখা একটি আর্টিক্যাল পড়ি। তাতে দুয়েকটি ঘটনার উল্লেখ ছিল। এতে লক্ষ্য করা যায়, নির্বাচনী দায়িত্বে যারা নিয়োজিত সেই নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে অনড় ছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনিয়ম সম্পর্কে তারা কঠোর অবস্থান নিতে পিছপা হননি। ভারতের সুসংহত গণতন্ত্রের জন্য দেশটির ইসির ভূমিকাকে সামনে রাখছেন এ কমিশনার। বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ভারত যে অনেক বৈপরিত্য সত্ত্বেও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সমুন্নত রেখেছে, তার পেছনে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের অবদান কম নয়। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিজের দুই বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমার দুই বছরের অভিজ্ঞতায়, বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশেষত, নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে সাধারণত কোনো নেতিবাচক বিষয় লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে আমরা দ্বিধান্বিত। সবাই যেন কাগজে-পত্রে গা বাঁচিয়ে চলতে চান। কোনো কোনো গণমাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিয়ে ইসি মাহবুব তালুকদারের বিপরীতমুখী বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কেউ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমার কথার বিরোধিতা করতে পারেন তা হলে আমি খুশি হব। আমি মনে করি, নির্বাচনে প্রকৃত চিত্রটি সব প্রতিবেদনে উঠে আসা উচিত। সব প্রার্থীর প্রতি সমআচরণে নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা থাকা উচিত মন্তব্য করে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মর্যাদা এর কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে। কমিশনের সম্মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সব প্রার্থীর প্রতি সমআচরণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সম্মান, মর্যাদা ও পবিত্রতা অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসূত্র: যুগান্তর এমইউ/০৩:৩৫/৩১ জানুয়ারি

from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2HGtDFz