ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি- দুই দিন আগে জাহালম বড় ভাই শাহানূরের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, দুদকের অধিকতর তদন্তে তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন। যেকোনো দিন কারাগার থেকে মুক্ত হবেন। ভাইয়ের কাছ থেকে এমন খবর জানার পর জাহালমের মুখে হাসি ফুটেছে। ইতিমধ্যে চারটি মামলায় জাহালমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার হয়ে গেছে। দুই বছর আগে (২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি) যে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন, সেই আদালতে বুধবার সকালে জাহালমকে তোলা হয়। দুপুর ১২টার দিকে এ প্রতিবেদককে দেখার পর জাহালম মুচকি হাসি দিয়ে আক্ষেপের সুরে বলেন, কতবার যে বলেছি, স্যার, আমি সালেক না, আমি জাহালম। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি আমার কথা। কারাগার থেকে আদালত আবার আদালত থেকে কারাগারএভাবেই দিন কাটছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬এর আসামির কাঠগড়ায় জাহালমের সঙ্গে ক্রাচে ভর করে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামলার আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে সাগর আহমেদ। যিনি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হককে কারাগারে বলেছিলেন, প্রকৃত আবু সালেককে তিনি চেনেন। কারণ, একসঙ্গে ব্যবসাও করেছেন। বুধবারও সাগর আহমেদ বলেন, আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই জাহালম সালেক নন। জাহালম তখন বলতে থাকেন, আমি যে সালেক না, তা কেউ বিশ্বাসই করেনি। জাহালম সালেক নন এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে নিরীহ জাহালমের গ্রেপ্তারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতিনিধি ও আইনসচিবের প্রতিনিধিকে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় সশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় (দুদক) নিরীহ জাহালম গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকার ঘটনায় গত মঙ্গলবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, জাহালম যখন কারাগার থেকে বের হয়ে যাবেন, তখন আরেকটা অনুসন্ধান করে মামলা হাতে নেওয়া হবে। এ ঘটনা কীভাবে হলো, কার কারণে হলো, তাও খুঁজে বের করা হবে। জাহালমের দিনগুলো চিঠি পাওয়ার পর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে পাঁচ বছর আগে জাহালম বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। বাংলায় লিখতে পারলেও ইংরেজিতে লিখতে জানেন না। কিন্তু নিরীহ পাটকলশ্রমিক জাহালমের কথা সেদিন দুদকের কেউ বিশ্বাস করেননি। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। প্রিজন ভ্যানে করে জাহালমকে বুধবার যখন আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি বলেন, মানুষের কাপড় ধুয়ে দিন কাটছে, বিনিময়ে পাই লুঙ্গি, প্যান্ট। ভাইয়ে তো ঠিকমতো খাইতে টাকাপয়সা দিতে পারে না, তাই মানুষের নানা কাজ করে থাকি। বিনিময়ে যে যা পারে তাই দেন। জাহালম আছেন কাশিমপুর কারাগারের ৫ নম্বর ভবনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। জাহালম জানালেন, বিনা দোষে কারাগারে তাঁর কষ্টে দিন কাটছে। রাতের বেলা বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানদের কথা মনে করে কেঁদেছেন। জাহালম বললেন, আমার সব সময় মাথায় একটাই চিন্তা আসত, আমি বোধ হয় আর কোনো দিন জেল থেকে বের হতে পারব না। বুধবার সন্ধ্যার ঠিক আগে প্রিজন ভ্যানের ফাঁক গলে জাহালম ভাই শাহানূরকে বলছিলেন, ভাই, কবে বের হতে পারব? শাহানূর তখন জাহালমকে বলেন, ভাই, তুমি চিন্তা কোরো না। শিগগিরই তুমি বের হবা। এ সময় হর্ন বাজিয়ে কারাগারের উদ্দেশে জাহালমের প্রিজন ভ্যান ছেড়ে যায় আদালত চত্বর। জাহালমকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিকার কমিশন। জাহালমের আইনজীবী আকরাম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ইতিমধ্যে চারটি মামলায় জাহালমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার হয়ে গেছে। বাকিগুলো শিগগিরই হবে বলে তিনি আশা করছেন। আর/০৮:১৪/৩১ জানুয়ারি

from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2MFQCzv