ঢাকা, ০১ ফেব্রুয়ারি- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বইয়ের চাহিদা কখনও শেষ হবে না। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি ওই সময়ের দিনলিপি উপস্থিত অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে ছাত্র সমাজের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন। শুক্রবার বিকালে বাংলা একাডেমি চত্বরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, অসাম্প্রদয়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যেখানে দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান থাকবে না। সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের শহীদ দিবসই নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দুজন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান লাভ করে। ৭৫এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে খুনি জাতির পরিচিতি লাভ করেছিলো। আজ আবারও আমরা আমাদের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরেছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বই এবং বই মেলার প্রতি ভালোবাসা ফুটে ওঠে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থাকায় ইচ্ছে থাকলেও মেলায় আসতে পারেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা। বাঙালির ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস। আর সেটিই আমাদের অর্জন। আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন বইমেলায় এসে অনবরত ঘুরে বেড়াতাম। এখন বলতে গেলে এক ধরনের বন্দি জীবনই যাপন করতে হয়, সেই আসার সুযোগ হয় না। আসতে গেলে অন্যের অসুবিধা হয়। এই নিরাপত্তার কারণে মানুষের যে অসুবিধাগুলো হবে, সেটা বিবেচনা করে আর আসার ইচ্ছাটাও হয় না। আমার জন্য অন্যেরা কষ্ট পাবে। কিন্তু সবসময় সত্যি কথা বলতে কী, মনটা পড়ে থাকে-এই বইমেলায়। শিশুদের মাঝেও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাহিত্য চর্চা পারে যুব-সমাজকে সঠিক পড়ে ধরে রাখতে। বই পারে আমাদের চিন্তা চেতনা বিকশিত করতে। আজ আমরা অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। আর কখনও বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি মর্যদা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। আমিও যতোবার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি তা বাংলাতেই দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বইমেলায় গিয়ে বই কিনে নতুন বইয়ের ওপর হাত দেওয়ার আনন্দই আলাদা। তবে বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। তাই অন্যান্য লাইব্রেরির পাশাপাশি ডিজিটাল লাইব্রেবির পয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজে বই মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া যায়। তিনি বলেন, আমাদের সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা পয়সায় বই তুলে দিয়েছে। আমরা বৃত্তি দিই, উপবৃত্তি দিই। শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ যাতে দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে তার জন্য আমরা কাজ করছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। এছাড়া, বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ভাষার এ মাসে, লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের পদচারণায় জাতির অহঙ্কারের এ মেলা ঘিরে মাসব্যাপী মুখর থাকবে একাডেমি প্রাঙ্গণ। নতুন গ্রন্থ আর গ্রন্থপ্রেমীদের মুখর রাখতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার পর দর্শনার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ (ভারত), প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক ও গবেষক মোহসেন আল-আরিশি (মিশর)। গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চারটি বিভাগে নির্বাচিত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়। চার লেখকের হাতে বাংলা একাডেমি পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার পদক পেয়েছেন কবিতায় কাজী রোজী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে আফসান চৌধুরী, কথাসাহিত্যে মোহিত কামাল ও প্রবন্ধ-গবেষণা সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। প্রতি শুক্র ও শনিবার বইমেলায় শিশু প্রহর থাকবে। এ দুদিন মেলার আসর বসবে বেলা ১১টায়। শিশু প্রহর চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এরপর বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে মেলার দ্বিতীয় পর্ব। শুক্র ও শনিবার বাদে অন্যান্য দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টা থেকে। উন্মুক্ত থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতবারের মতো এবারও মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শিশু কর্নার রয়েছে। এ কর্নারে শিশুদের চিত্ত-বিনোদনের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। সেখানে শিশুবিষয়ক লেখকরাও কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে আড্ডা দেবেন। মেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে মাসব্যাপী থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেলায় যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে মেলা প্রাঙ্গণ ঘিরে থাকবে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। এমএ/ ০৭:০০/ ০১ ফেব্রুয়ারি

from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2BeQd2m