ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি- ফের ঢাকা আসছেন কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ দূত বব রে। আগামী শুক্রবার ৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন তিনি। সফরকালে নবগঠিত সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সিরিজ বৈঠক ছাড়াও কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এমনটাই জানিয়েছে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র। সরকারি সূত্রও বব রের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে এটা-ও জানানো হয়েছে- সদ্য বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘ দূত ইয়াং হি লির কানাডা দূত বব রের রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত হতে থাকা ভাসানচর পরিদর্শনের কোনো আগ্রহ বা সম্ভাবনা নেই। সূত্র মতে, পঞ্চমবারের মতো কানাডার ওই বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফর করছেন। অবশ্য তিনি মিয়ানমারও সফর করেছেন। কানাডাভিত্তিক সমপ্রচারমাধ্যম সিটিভির খবর মতে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অত্যন্ত আন্তরিক কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টপ্রাপ্ত রাজনীতিক কাম কূটনীতিক বব রে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর থেকে ফিরে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কানাডায় আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি চলমান মানবিক সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার প্রেক্ষিতে পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। অক্টোবরে টরেন্টোর সাবেক এমপি বব রেকে মিয়ানমারের বিশেষ দূত নিয়োগ দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ নিয়ে তিনি তদন্ত শুরু করেন। একটি প্রতিবেদনও জমা দেন তার সরকারের কাছে। বিশেষ দূতের এই প্রতিবেদনে মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধের শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয়া হয়। বব রে তার রিপোর্টে লিখেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কী ধরনের মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সরাসরি গুলি ও সামরিক সহিংসতা ছাড়াও আমি যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষভাবে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। শরণার্থী শিবিরে আসার পথে শিশু ও বৃদ্ধদের মৃত্যুর কথাও শুনেছি। প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট দেখার জন্য তাকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে দেয়া না হলেও গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেখানে যান। বব রে তার প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি, সংগঠন ও কোম্পানির বিরুদ্ধে কানাডা ও এর মিত্র দেশগুলোকে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেন। তিনি মনে করেন মিয়ানমার ও বাংলাদেশে চলমান সংকটে কানাডার উদ্যোগ দেশটির পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি লিটমাস টেস্ট বা অগ্নিপরীক্ষা। সংকট নিরসনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকে আলোচ্যসূচিতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে জোরালো ভূমিকা রাখেন তিনি। গত বছর কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-সেভেন সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সংকটকে প্রাধান্য দেয়ার সুপারিশ ছিল তার। বব রের ভাষ্য মতে, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সামর্থ্যের মধ্যে মিয়ানমারের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মিয়ানমারকে কোনো ধরনের সামরিক সহায়তা এবং তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ভ্রমণের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ সংকটের সমাধান হবে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসন এবং সেখানে তাদের নিরাপদ বসবাস ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ার পর। রাখাইনে তাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি না হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়ে সঙ্কটের সমাধান হবে না। তিনি বলেন, মিয়ানমার সফরে গিয়ে সে দেশের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে এটা বুঝতে পেরেছি যে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরেও এ সঙ্কট সমাধানের উপায় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তিনি সুচি সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দ্রুত সংকটটির টেকসই সমাধান না হলে গোটা অঞ্চলে এরা ছড়িয়ে পড়বে এবং এটা উগ্রবাদকে উস্কে দেবে, যার খেসারত পুরো বিশ্বকে দিতে হবে। এমএ/ ১১:২২/ ৩০ জানুয়ারি

from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2G0T8je